মাত্র ৩১৩ জন সাহাবী {রাঃ} নিয়ে মহানবী {ﷺ} সশস্ত্র সহস্রাধিক কাফিরের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ইসলামের বিজয় ছিনিয়ে আনেন। এই যুদ্ধে আল্লাহ্ তা’আলা ফিরিশতা পাঠিয়ে তাঁর প্রিয় হাবিব {ﷺ}-কে সরাসরি সাহায্য করেন। এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের উত্থান শুরু হয় এবং এটি শেষ হয় মাক্কাহ্ শারীফ বিজয়ের মাধ্যমে। হুযুরে পোরনূর {ﷺ} হলেন বিশ্বের সর্বকালের সেরা একজন বিচক্ষণ, ন্যায়পরায়ণ, উদার ও পরাক্রমশালী সেনানায়ক, রাজনীতিবিদ ও সুবিবেচক শাসক।
তাই মাহে রমযানের এই দিনের গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে অপরিসীম। আজকের এই দিনে মুসলমানরা যদি পরাজিত হতো তাহলে হয়তো ইসলামের নাম নিশানা মুছে যেতো। এ যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে মুসলমানদের যাত্রা শুরু হয়। মুসলমানদের কাছে সত্য, ন্যায়, নিষ্ঠা, শক্তি, সাহস ও প্রেরণা দৃঢ় হয়। অন্য ধর্মাবলম্বীগণও ইসলাম যে একটি সত্য ধর্ম ও এই ধর্মের আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন।
বদর যু্দ্ধ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র ক্বুরআন শারীফে ইরশাদ করেন,—“স্মরণ কর, যখন তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলে, তিনি তা কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি তোমাদের সাহায্য করব এক হাজার ফিরিশতা দিয়ে, যারা একের পর এক আসবে। আল্লাহ তা করেন, কেবল সুসংবাদ দেওয়ার জন্য এবং এ উদ্দেশ্যে, যাতে তোমাদের চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে এবং সাহায্য তো শুধু আল্লাহর নিকট থেকেই আসে, আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।-[সূরাহ্ আনফাল, আয়াত : ৯-১০।]
প্রধান সেনাপতির সাথে প্রধানত ছিলো খোদায়ী নুসরত বা আসমানী সাহায্য, ভিন্নধর্মী সেনাবাহিনী ৩১৩ জন। সমগ্র সেনাদলে ঘোড়া ছিলো মাত্র দু’টি, ৭০টি উট, ৮টি তরবারি। তাও কিছু তরবারি ছিলো ভাঙ্গা, ৬টি তীর ধনুক, সবার জবানে একটি ধ্বনি ছিল ‘আল্লাহু আকবার’ এসব নিয়েই হুযুর পোরনূর {ﷺ} ও তাঁর সাথীগণ {রাঃ} বদর প্রান্তরে এসেছিলেন পরিবর্তন করতে পুরো পৃথিবীর তাকদীর। এই তাওহীদী নেশার কারণেই প্রচন্ড গরমে, রমযানুল মুবারকের ১৭তম দিনে রোযা মুখে, স্বল্পসংখ্যক সৈন্য, অথচ শত্রুপক্ষের ঈমানবিহীন ১০০০ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী, ১০০ অশ্বারোহী, ৭০০ উষ্ট্রারোহী, ২০০ এর অধিক পদাতিক, অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত গোটা বাহিনী, কোটি কোটি টাকার সম্পদ- তাতে ভয় কী! সাইয়িদুনা হযরত মুহাম্মাদ {ﷺ}-এর সৈন্য বাহিনী জান দিতে ভয় করে না, শিরকেটে যাক কিংবা অক্ষত থাকুক তার কোনো পরোয়া করেনা, বরং সিদ্দিক্বে আকবার সাইয়িদুনা হযরত আবু বাকর {রাঃ} ও ফারুক্বে আজম সাইয়িদুনা হযরত উমার বিন খাত্তাব {রাঃ} সে সময়ে দয়াল নাবী {ﷺ}-কে অভয় দিয়ে বলেই ফেলেছেন,“হে হাদীয়ে যামান! আমাদের জান-মাল-সন্তান, আপনার ওপর ক্বুরবান।” সুবহান আল্লাহ!!!
কুল কায়িনাতের নাবী সাইয়িদুনা হযরত মুহাম্মাদ {ﷺ} মাক্কাহ্ শারীফের কাফির কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জন্মভূমি মাক্কাহ্ শারীফ, খানায়ে কাবা, পবিত্র বাড়িঘর, আত্মীয়-স্বজন প্রভৃতির মায়া কাটিয়ে সাহাবাগণ {রাঃ} সহ একটু শান্তিতে বসবাস করার আশায় মাদীনা শারীফে আগমন করেছিলেন। কিন্তু এখানে এসে তিনি শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছেন? হ্যাঁ, মাক্কাহ্ শারীফ থেকে একটু ভালো পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ভিতরে ভিতরে ইয়াহুদী, খ্রিস্টান ও পৌত্তলিক ধর্মাবলম্বীদের মনের তীব্র জ্বালা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা গোপনে গোপনে নাবীয়ে আকরাম {ﷺ}-কে নিঃশেষ করার জন্যে মাক্কাহ্ শারীফের কুরাইশ সর্দারদের সাথে বৈঠক করতো সুকৌশলে।
বর্ণিত আছে,—“প্রিয় নাবীজী {ﷺ}-এর সাথে ইয়াহুদীদের শত্রুতার প্রধান কারণ ছিলো সুদ নিয়ে। কারণ ইয়াহুদীগণ ছিলো সবাই বিরাট ধনী ও সুদখোর। তারা অন্য কোনো কাজ কর্ম করতো না। কেবল টাকা ধার দিত আর বসে বসে সুদের দ্বারাই পরম সুখে কাল যাপন করতো। আর হযরত রাসুলূল্লাহ্ {ﷺ} ছিলেন সুদের ঘোর বিরোধী। কারণ স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘য়ালা পবিত্র ক্বুরআন মাজীদে সুস্পষ্টভাবে সুদকে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। শুধু সুদ গ্রহণ করাই নয়, বরং সুদ প্রদান করাও হারাম বলে ঘোষিত হয়েছে। তাই মাদীনা শারীফের মুসলিমগণ সুদ প্রদানের শর্তে টাকা ধার করা সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়েছিলেন। যার ফলে সুদখোর ইয়াহুদীগণ বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। অতঃপর তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জোট পাকিয়ে ছিল।-[রেফারেন্স : সীরাতে মুস্তফা, পৃষ্ঠা : ৩৪৫।]
পরবর্তীতে মাক্কাহ্ শারীফ থেকে কুরাইশগণ দলবদ্ধভাবে একাধিক্রমে কয়েকবার মাদীনা শারীফের উপকণ্ঠে এসে দস্যুবেশে হামলা করে লুটপাট করে নিয়ে গেলো। এটিই ছিলো মাক্কাহ্ শারীফ ও মাদীনা শারীফের যুদ্ধের ভূমিকা বা ‘বদর’ যুদ্ধের প্রাথমিক সূত্রপাত।
প্রকৃতপক্ষে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের আত্মরক্ষামূলক। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম ধর্ম কাউকে আজকের মতো জিহাদের নামে বিনা কারণে মানুষ মারার বৈধতা দেয়নি। বদরের যুদ্ধই এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। অহেতুক অজুহাত সৃষ্টি করে মাক্কাহ্ শারীফের কাফিররা চেয়েছিল রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} ও তাঁর সাহাবীগণ {রাঃ}-কে হঠাৎ আক্রমন করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। কাফিরগণের আক্রমনের খবর পেয়ে প্রতিরোধ করতে গিয়ে আত্মরক্ষার্থে এই যুদ্ধে জড়িয়ে ছিলেন মহানবী {ﷺ} ও তাঁর সাহাবীগণ {রাঃ}।
📌বদরের যুদ্ধকালীন সময় :
বিভিন্ন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর একদিন রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} জানতে পারলেন যে, আবু সুফিয়ান ইবনে হারবের নেতৃত্বে কুরাইশদের একটি বিরাট কাফিলা সিরিয়ার দিক থেকে এগিয়ে আসছে। সে কাফিলায় কুরাইশদের সম্পদ এবং বাণিজ্যিক সম্ভার রয়েছে। আবু সুফিয়ান এক পর্যায়ে জানতে পারলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} ও তাঁর সাথীগণ {রাঃ} যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছেন। হিজাযের কাছাকাছি এসে আবু সুফিয়ান ব্যাপারটা আঁচ করতে পারলেন এবং দামদাম ইবনে আমর গিফারীকে তৎক্ষণাৎ মজুরীর বিনিময়ে মাক্কাহ্ শারীফ পাঠিয়ে দিলেন। কুরাইশদের ধন-সম্পদ রক্ষা করার জন্যে অস্ত্রে সজ্জিত লোক পাঠাতে ও নাবীয়ে কারীম {ﷺ}-এর সঙ্গীগণ {রাঃ}-কে আক্রমণ করার জন্যে লোক পাঠাতে বললেন। দামদাম খুব দ্রুত সংবাদ নিয়ে মাক্কাহ্ শারীফে পৌঁছে গেল।-[রেফারেন্স : সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা : ৩২৫।]
মাক্কাহ্ শারীফের কুরাইশ সর্দারগণ সংবাদ শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল, তারা দাঁত কিড়মিড় করে বলেছিল,—“মুহাম্মাদ {ﷺ} এবং তাঁর সাহাবীদের {রাঃ} মাক্কাহ্ শারীফের বাণিজ্য কাফিলার প্রতি চোখ তুলে তাকানোর সাহস কি করে হলো?”
অতঃপর কুরাইশ সর্দার আবু জাহিলের নেতৃত্বে মাক্কার সৈন্যবাহিনী পথে বেরিয়ে পড়লো।
পরিস্থিতির আলোকে প্রিয়নাবী {ﷺ} মাজলিশে শুরার বৈঠক আহ্বান করলেন। বৈঠকে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সেনা অধিনায়ক এবং সাধারণ সৈন্যদের মতামত নেয়া হয়। কিছু সংখ্যক মুসলমান রক্তাক্ত সংঘর্ষের কথা শুনে কাঁপতে শুরু করলো। নেতাদের মতামত চাওয়া হলো। সকলেই চমৎকার মনোভাব প্রকাশ করলো,—“ইয়া রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ}! আমরা আপনার সঙ্গে আছি।”
মুহাজিরগণ {রাঃ} ও আনসারগণ {রাঃ} অভয় দিয়ে নাবীয়ে আকরাম {ﷺ}-কে বললেন,—“সেই আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন। আপনি যদি আমাদের সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে চান, তবে আমরাও ঝাঁপিয়ে পড়বো। আমাদের একজন লোকও পেছনে পড়ে থাকবে না। আগামীকাল আপনি আমাদের সঙ্গে নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমাদের মনে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। আমরা রণনিপুণ। এমনও হতে পারে আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমাদের মাধ্যমে এমন বীরত্বের প্রকাশ ঘটাবেন, যা দেখে আপনার চক্ষু মুবারক শীতল হয়ে যাবে।”-[রেফারেন্স : আর রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা : ২১৬ স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত গ্রন্থ।] সুবহানাল্লাহ্!!!
অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} ও সাহাবীগণ {রাঃ} সম্পূর্ণভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে ‘হিমান’ নামক পাহাড় ডান দিকে রেখে বদর প্রান্তরের কাছাকাছি এসে তাঁবু স্থাপন করলেন। এখানে অবতরণের পর হুযুর পাক {ﷺ}-এর ‘গারে সুর’-এর সাথী সাইয়িদুনা হযরত আবু বাকর সিদ্দীক্ব {রাঃ}-কে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে বের হলেন। মাক্কাহ্ শারীফের সৈন্যদের তাঁবু দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এমন সময় আরবের একজন বৃদ্ধের দেখা পেলেন। প্রিয় নাবীজী {ﷺ} নিজের পরিচয় গোপন রেখে তাঁকে কুরাইশ ও মুহাম্মাদের সাহাবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু বুড়ো বেঁকে বসলেন।
সে বলল,—“নিজের ও দলের পরিচয় দিন অন্যথায় আমি কিছু বলবো না। নাবী কারীম {ﷺ} বললেন,—“আপনার কাছে আগে আমরা যা জানতে চেয়েছি তা বলুন পরে আমরা আমাদের পরিচয় দেবো।”
বৃদ্ধ বললেন,—“মুহাম্মাদ {ﷺ} ও তাঁর সাথীগণ {রাঃ} যদি আমাকে সত্য বলে থাকে তাহলে তারা অমুক জায়গায় থাকার কথা এবং মাক্কাহ্ শারীফের কুরাইশ সাংবাদিকরা যদি সত্য বলে থাকে তাহলে তারা অমুক জায়গায় থাকার কথা।”
ঠিক তার কথামত সে জায়গায়ই প্রত্যেকে অবস্থান করেছিল। অতঃপর মাক্কাহ্ শারীফের কুরাইশ বাহিনী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নেয়া শুরু করলেন সাহাবায়ে কিরাম {রাঃ}। পরের দিন রিপোর্টার সাহাবীগণ {রাঃ} কয়েকজন ব্যক্তিকে ধরে এনে রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ}-এর কাছে উপস্থাপন করলেন।
রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} বললেন,—“আবু জাহিলের লোক কত?”
তারা বললো,—“জানি না।”
জিজ্ঞেস করা হলো,—“দৈনিক তারা কয়টি উট জবাই করে?”
তারা বললো,—“৯টি আবার কোনো দিন ১০টি।”
তখন রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} বললেন,—“তাদের সংখ্যা ৯০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে হবে।”-[রেফারেন্স : আর রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা : ২১৭। জামে তিরমিযী, আবওয়াবুল জিহাদ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা : ২০১।]
রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} এরপর সেনা বিন্যাস করেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রওয়ানা হয়ে যান। সেখানে নাবীয়ে কারীম {ﷺ} হাত মুবারকের ইশারা করে দেখিয়ে বলেছিলেন যে,—“আগামীকাল ইনশাআল্লাহ্ এই জায়গা হবে অমুকের বধ্যভূমি।”
অতঃপর সাহাবাগণ {রাঃ} নিরুদ্বেগ প্রশান্তির সাথে রাত কাটালেন ফলে আল্লাহ্ তা‘য়ালা সে রাতেই রহমতের বৃষ্টি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, মাওলার রহমত তোমার সাথে আছে। পবিত্র ক্বুরআনে আল্লাহ্ তা‘য়ালা জানিয়ে দিলেন,—“অর্থাৎ স্মরণ কর, তিনি তার পক্ষ থেকে তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন এবং আকাশ থেকে তোমাদের উপর বারি বর্ষণ করেন; তা দ্বারা তিনি তোমাদের পবিত্র করবেন, তোমাদের থেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা অপসারণ করবেন, তোমাদের হৃদয় দৃঢ় করবেন এবং তোমাদের পা স্থির করবেন।”-[রেফারেন্স : সূরাহ্ আনফাল, আয়াত : ১১।]
খোঁজ নিয়ে জানা গেল সে সময়ে শত্রুদের মাঝে পারস্পরিক মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। একদল যুদ্ধ করবে আরেক দল যুদ্ধ না করে ফিরে যাবে কিন্তু আবু জাহিলের কুটনৈতিক বুদ্ধির কাছে তারা হার মানলো। উভয় বাহিনী যখন মুখোমুখি হতে শুরু করল। প্রিয়নাবী {ﷺ} আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করলেন,—“হে আল্লাহ্! কুরাইশরা পরিপূর্ণ অহঙ্কারের সাথে তোমার বিরোধীতায় এবং তোমার রাসূলকে মিথ্যা প্রমাণ করতে এগিয়ে এসেছে। হে আল্লাহ্! আজ তোমার প্রতিশ্রুত সাহায্য বড় বেশি প্রয়োজন। হে আল্লাহ্! আজ তুমি ওদের ছিন্ন ভিন্ন করে দাও।”
হাদীস শারীফে বর্ণিত আছে, কাতার সোজা করার পর নাবীজী {ﷺ} সাহাবীগণ {রাঃ}-কে বললেন, তার পক্ষ থেকে নির্দেশনা পেয়ে কেউ যেন যুদ্ধ না করে। তিনি বললেন,—“ পৌত্তলিকরা যখন দলবদ্ধভাবে তোমাদের কাছে আসবে তখন তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করবে, লক্ষ্য রাখবে যেন তীরের অপচয় না হয়।”-[রেফারেন্স : সহীহ্ বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা : ৫৬৮।]
হাদীস শারীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} আরও ইরশাদ করেছেন,—“ওরা তোমাদেরকে ঘিরে না ফেলা পর্যন্ত তরবারি চালনা করবেনা।”-[রেফারেন্স : সুনান আবু দাউদ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা : ১৩।]
অতঃপর রাসূলে আকরাম {ﷺ} সাইয়িদুনা হযরত আবু বাকর সিদ্দীক্ব {রাঃ}-কে সঙ্গে নিয়ে অবস্থান কেন্দ্রে চলে গেলেন।
অন্যদিকে পৌত্তলিকদের হেডমাস্টার ও সভাপতি আবু জাহিল আল্লাহর কাছে ফয়সালার জন্য দূ‘আ করলো। সে বললো,—“হে আল্লাহ্! আমাদের মধ্যে যে দল আত্মীয়তার সম্পর্ক অধিক ছিন্ন করেছে এবং ভুল কাজ করেছে, আজ তুমি তাদেরকে ধ্বংস করে দাও এবং তুমি আমাদের সাহায্য কর।”
পরবর্তী সময়ে আবু জাহিলার এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ্ তা‘য়ালা ক্বুরআন মাজীদে ইরশাদ ফরমান,—“তোমরা মীমাংসা চেয়েছিলে তা তোমাদের কাছে এসেছে। যদি তোমরা বিরত হও সেটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। যদি তোমরা পুনরায় তা করো; তবে আমিও পুনরায় শাস্তি দেব এবং তোমাদের দল সংখ্যায় অধিক হলেও তোমাদের কোনো কাজে আসবেনা এবং আল্লাহ্ তা‘য়ালা মু’মিনদের সঙ্গে রয়েছেন।”-[রেফারেন্স : সূরাহ্ আনফাল, আয়াত : ১৯।]
📌দু’পক্ষের সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী:
মুসলিমঃ প্রিয়নাবী সাইয়িদুনা হযরত মুহাম্মাদ {ﷺ}, সাইয়িদুনা হযরত আবু বাকর সিদ্দীক্ব {রাঃ}, সাইয়িদুনা হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব {রাঃ}, সাইয়িদুনা হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব {রাঃ}, সাইয়িদুনা হযরত আলি ইবনে আবি তালিব {রাঃ}।
কাফিরঃ আবু হাকাম ওরফে আবু জাহিল, উৎবা ইবনে রাবিয়া, উমাইয়া ইবনে খালাফ।
অতঃপর মুসলিম বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ মুজাহিদ সাইয়িদুনা হযরত উবাইদা {রাঃ} উৎবা ইবনে রাবীয়ার বিরুদ্ধে ও সাইয়িদুনা হযরত হামযা {রাঃ} শাইবার বিরুদ্ধে এবং সাইয়িদুনা হযরত আলী {রাঃ} ওয়ালীদ ইবনে উৎবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং প্রত্যেককে খতম করে দিলেন।-[রেফারেন্স : সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা : ৩৪৩।]
উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} মহান আল্লাহর দরবারে এই দূ‘আ করলেন,—“হে আল্লাহ্! যদি আজ মুসলমানদের এই দল নিশ্চিহৃ হয়ে যায়; তবে দুনিয়ায় ইবাদাত করার মতো কেউই থাকবে না। হে আল্লাহ্! তুমি কি এটা চাও যে, আজকের পরে কখনোই তোমার ইবাদাত করা না হোক?” সাইয়িদুনা হযরত আবু বাকর সিদ্দীক্ব {রাঃ} বললেন,—“ইয়া রাসূলুল্লাহ {ﷺ}! হাত মুবারক নামান, থামুন, আপনার দূ‘আর কারণে আল্লাহর আরশ কাঁপছে।”
আল্লাহ্ তা‘য়ালা ফিরিশতাদের প্রতি আদেশ পাঠালেন যা ক্বুরআন কারীমে উল্লেখ করা হয়েছে,—“স্মরণ করো, তোমাদের প্রতিপালক ফিরিশতাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন যে, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। সুতরাং তোমরা মু’মিনদেরকে অবিচলিত রাখো; যারা কুফরী করে আমি তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে দেব। হে ফিরিশতাগণ, তোমরা শত্রুদের গর্দানের উপরিভাগে আঘাত করো; আরো আঘাত হানো প্রত্যেক গিরায় গিরায়।”-[রেফারেন্স : সূরাহ্ আনফাল, আয়াত : ১২।]
এদিকে আল্লাহ্ তা‘য়ালা তার প্রিয়নাবী {ﷺ}-এর প্রতি এ মর্মে অহী পাঠালেন,—“আমি তোমাদেরকে সাহায্য করবো একহাজার ফিরিশতা দ্বারা, যারা একের পর এক আসবে।”-[রেফারেন্স : সূরাহ্ আনফাল, আয়াত : ৯।] রাসূলে পাক {ﷺ}-এর কাছে এ সময় ফিরিশতাগণের সর্দার হযরত জিবরাঈল {আঃ} আগমন করলেন। হযরত ইবনে ইসহাক {রহঃ}-এর বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} বললেন,—“আবু বাকর খুশি হও, তোমাদের কাছে আল্লাহর সাহায্য এসে পৌঁছেছে। জিবরাঈল ঘোড়ার লাগাম ধরে ঘোড়ার আগে আগে আসছেন। ধুলোবালি উড়ছে।”
রাসূলে কারীম {ﷺ} এরপর কামরা থেকে বর্ম পরিহিত অবস্থায় বের হলেন এবং উদ্দীপনাময় ভঙ্গিতে সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্যে সাহাবীগণ {রাঃ}-কে বলেছিলেন। আর তিনি {ﷺ} এক মুঠো ধূলি কাফিরদের প্রতি নিক্ষেপের সময় বললেন, ‘শাহাতিল উজুহ্’ অর্থাৎ ওদের চেহারা আচ্ছন্ন হোক। এই নিক্ষিপ্ত ধুলি প্রত্যেক কাফিরের চোখ, মুখ, নাক ও গলায় প্রবেশ করলো। একজনও বাদ গেল না। যা বর্তমান সময়ের মারনাস্ত্র, ক্ষেপনাস্ত্র, চালকবিহীন ড্রোন থেকেও হাজার হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী ছিলো। এ সর্ম্পকে আল্লাহ্ তা‘য়ালা ক্বুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন,—“এবং তখন তুমি নিক্ষেপ করোনি, বরং আল্লাহ্ তা‘য়ালাই নিক্ষেপ করেছিলেন।”-[রেফারেন্স : সূরাহ্ আনফাল, আয়াত : ১৭।]
তখন নাবীয়ে আকরাম {ﷺ} সকলকে অগ্রগামী হয়ে যুদ্ধ করার জন্যে তাগিদ দিলেন এবং বললেন,—“যারা এই যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করবে তারা জান্নাতি।” সাহাবায়ে কিরাম {রাঃ} এ কথা শুনে আরো খুশি হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ} যখন এই জবাবী হামলার নির্দেশ দেন তখন শত্রুদের হামলার তীব্রতা কমে আসে। রাসূলে কারীম {ﷺ}-এর উৎসাহে সাহাবীগণ {রাঃ} বিপুল বিক্রমে লড়াই করেন। এ সময়ে ফিরিশতাগণ {আঃ} মুসলমানদের সাহায্য করেন।”-[রেফারেন্স : মুসলীম শারীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা : ১৩৯।]
যখন অভিশপ্ত ইবলিস শয়তান কুরাইশদের কাছে সুরাকা ইবনে মালিকের আকৃতি ধারন করে যুদ্ধে সাহায্য করার কথা বলেছিল কিন্ত যুদ্ধের ময়দান থেকে পালায়নের সময় মাক্কার মুশরিকরা বলতে লাগলো,—“সুরাকা! তুমি কোথায় যাচ্ছ? তুমি কি বলনি আমাদের সাহায্য করবে?”
সুরাকা বললো,—“আমি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছি যা তোমরা দেখতে পাওনা। আল্লাহকে আমার ভয় হচ্ছে, তিনি কঠোর শাস্তিদাতা।” এরপর সুরাকার রূপধারণকারী ইবলিশ শয়তান সমুদ্রে গিয়ে আত্মগোপন করলো।-[রেফারেন্স : আররাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা : ২২৫।]
শয়তানের পলায়ন করার কারণ সর্ম্পকে শয়তান নিজেই যা বললো আল্লাহ্ তা‘য়ালা ক্বুরআন শারীফে ইরশাদ করে তা বিশ্ববাসীকে শুনিয়ে দিলেন। অর্থাৎ,—“আমি তোমাদের থেকে সরে দাঁড়ালাম। কেননা আমি যা দেখতে পাচ্ছি (ফিরিশতাদলকে) তোমরা তা দেখতে পাচ্ছনা। আমার অন্তরে খোদার আর আল্লাহর শাস্তি অতি কঠিন।-[রেফারেন্স : সূরাহ্ আনফাল, আয়াত : ৪৮।]
বদর যুদ্ধে ফিরিশতাগণ {আঃ} অংশগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু কিভাবে শত্রু নিধন করতে হয় তা তাদের জানা ছিলনা। আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁদেরকে শত্রুর উপর আঘাত হানার কৌশল শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ করেন,—“হে ফিরিশতাগণ, তোমরা শত্রুদের গর্দানের উপরিভাগে আঘাত করো; আরো আঘাত হানো প্রত্যেক গিরায় গিরায়।”-[রেফারেন্স : সূরাহ্ আনফাল, আয়াত : ১২।]
ফিরিশতাগণ {আঃ} কর্তৃক শত্রু নিধনের আলামত ছিল গলায় কালো দাগ। সাহাবায়ে কিরাম {রাঃ} বলেন,—“আমরা তরবারি দ্বারা আঘাত করার পূর্বেই কাফিরদের মস্তক দ্বিখন্ডিত হয়ে পড়তো। এভাবে ৭০ জনের মধ্যে ৬৪ জন ছিল ফিরিশতাগণ {আঃ}-এর আঘাতে নিহত হয়েছে। আমাদের হাতে মাত্র ৬ জন নিহত হয়েছে।-[রেফারেন্স : তাফসীরে রুহল বয়ান।]
📌বদর যুদ্ধে প্রিয় রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ}-এর মু’জিযা :
অপরদিকে কুল ক্বায়িনাতের নাবী {ﷺ}-এর মু’জিযা যুদ্ধের ময়দানে প্রকাশ পেলে সাহাবায়ে কিরাম {রাঃ} আরো তেজদীপ্ত হয়ে উঠেন। যুদ্ধে সাইয়িদুনা হযরত ওয়াকাশা {রাঃ} নামক এক সাহাবীর তরবারি ভেঙ্গে যায়। নাবীয়ে কারীম {ﷺ} তাকে খেজুরের একটি শুকনো ডাল দিয়ে বললেন,—“তুমি এটা দিয়ে যুদ্ধ করো। আল্লাহ্ তা‘য়ালার ক্বুদরতে খেজুরের ডাল ইস্পাতের তলোয়ারে পরিণত হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ্!!! এই তলোয়ারের নাম রাখা হয় ‘আউন’ বা আল্লাহর সাহায্য। যা দিয়ে সাইয়িদুনা হযরত ওয়াকাশা {রাঃ} জীবনভর যুদ্ধ করেছেন।
অন্যদিকে যুদ্ধের ময়দানে সাইয়িদুনা হযরত মুয়ায ইবনে আমর {রাঃ}-এর একটি হাত আবু জাহিলের পুত্র ইকরামার (বিঃদ্রঃ হযরত ইকরামা {রাঃ} পরবর্তীতে সাহাবী হয়েছিলেন) আঘাতে দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। তিনি {রাঃ} হাতের খন্ডিত অংশ নিয়ে নাবী পাক {ﷺ}-এর কাছে উপস্থিত হলেন এবং দয়াল নাবী {ﷺ} সেই খন্ডিত হাত সংযুক্ত করতে তাতে স্বীয় থুথু মুবারক লাগিয়ে জোড়া দিয়ে দিলেন। সাথে সাথে মহান আল্লাহর মেহেরবাণীতে তার {রাঃ} হাতখানা জোড়া লেগে গেল। আল্লাহু আকবার!!! তিনি উক্ত হাত নিয়ে সুস্থ অবস্থায় সাইয়িদুনা হযরত উসমান {রাঃ}-এর খিলাফাতকাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। সুবহানাল্লাহ্!!!
কিছুক্ষণের মধ্যেই অমুসলিমদের বাহিনীতে ব্যর্থতা ও হতাশার সুস্পষ্ট লক্ষণ ফুটে উঠলো। মুসলমানদের প্রবল আক্রমণের মুখে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লো। কাফির কুরাইশরা পশ্চাদপসারণ করতে লাগলো এবং তাদের মনে হতাশা ছেয়ে গেল। মুসলমানরা কাউকে হত্যা করেছিলেন, কাউকে যখম করেছিলেন, কাউকে ধরে নিয়ে এসেছিলেন। ফলে কাফিররা সুস্পষ্ট পরাজয় বরণ করলো। তবুও আবু জাহিল লাত, মানাত, উয্যার কসম খেয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল,—“উৎবা, শায়বা, অলীদ নিহত হয়েছে দেখে তোমরা হিম্মাত হারিওনা।”
এরপর রাসূলে খোদা {ﷺ} কুরাইশ নেতৃবৃন্দের লাশ কুয়ার মধ্যে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিলেন। তিনি {ﷺ} কুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে একে একে কুয়ায় নিক্ষিপ্ত সকলের নাম নিয়ে ধ্বনি করে বললেন,—“হে কুয়ার অধিবাসী! হে উৎবা, হে শায়বা, আল্লাহ্ তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা যথাযথভাবে পেয়েছো? আমি তো আমার রবের প্রতিশ্রুতি বাস্তবরূপে পেয়েছি।”-[রেফারেন্স : বুখারী শারীফ, মুসলিম শারীফ, মিশকাত শারীফ।]
📌যুদ্ধের ফলাফল ও পরবর্তী ঘটনা : মুসলমানদের বিজয় পরিপূর্ণ হওয়ার পর প্রিয়নাবী {ﷺ} মাদীনাবাসীদের তাড়াতাড়ি সুসংবাদ দেওয়ার জন্য দুইজনকে দ্রুত মাদীনা শারীফে প্রেরণ করলেন। তারা হলেন, সাইয়িদুনা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে রওয়াহা {রাঃ} ও সাইয়িদুনা হযরত যায়িদ ইবনে হারিসা {রাঃ}। মাদীনা শারীফের ঐ সময় বিজয়ের খবর পৌঁছলো যখন নাবীজী {ﷺ}-এর মেয়ে সাইয়িদুনা হযরত উসমান যুন্নূরাঈন {রাঃ}-এর সহধর্মিণী সাইয়িদা রুকাইয়া {রাঃ}-এর ক্ববরের মাটি সমান করা হচ্ছিল। সাইয়িদা রুকাইয়া {রাঃ} অসুস্থ ছিলেন, যার কারণে নাবীয়ে আকরাম {ﷺ} প্রিয় সন্তানের মায়া ত্যাগ করে মহান আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য তার পাশে সাইয়িদুনা হযরত উসমান {রাঃ}-কে রেখে বদর যুদ্ধে গিয়েছিলেন।
সাইয়িদুনা হযরত আনাস {রাঃ} থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,—“হারিস {রাঃ} একজন নওজওয়ান ছিলেন। বদরযুদ্ধে তিনি শাহাদাত বরণ করার পর তাঁর মাতা রাসূলে কারীম {ﷺ}-এর কাছে এসে বললেন,—“ইয়া রাসূলুল্লাহ্ {ﷺ}! হারিস আমার কত আদরের আপনি তো অবশ্যই জানেন। সে যদি জান্নাতি হয় তাহলে আমি ধৈর্য্য ধারণ করবো এবং আল্লাহর নিকট সওয়াবের আশা পোষণ করবো। আর যদি না হয় তাহলে আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন আমি (তার) জন্য যা করছি।” তখন তিনি {ﷺ} বললেন,—“তোমার কি হলো, তুমি কি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলে?” বেহেশত কি একটি? (না, না) বেহেশত অনেকগুলি, সে তো জান্নাতুল ফিরদাউসে অবস্থান করছে।”-[রেফারেন্স : বুখারী শারীফ, ষষ্ঠ খণ্ড।] সুবহানাল্লাহ্!!!
📌বদর যুদ্ধের বিজয়কে মহানবী {ﷺ} মহান আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য কল্যাণ ও উত্তম প্রতিদান অভিহিত করেছেন :
সাইয়িদুনা হযরত আবু মুসা {রাঃ} থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,—“রাসূলুল্লাহ {ﷺ} বলেছেন,—“আমি স্বপ্নে যে কল্যাণ দেখতে পেয়েছিলাম সে তো ঐ কল্যাণ যা পরবর্তী সময়ে আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমাদের দান করেছেন। আর উত্তম প্রতিদান সম্বন্ধে যা দেখেছিলাম তা তো আল্লাহ্ আমাদের দান করেছেন বদরযুদ্ধের পর।-[রেফারেন্স : বুখারী শারীফ, ষষ্ঠ খণ্ড]
📌পরিশেষে, বদরের যুদ্ধ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক নিদর্শন ও অনুপ্রেরণা লাভের অন্যতম শিক্ষা। এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় এটা প্রমাণ করে যে সত্যনিষ্ঠ কাজে বিজয়ের জন্য মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে, ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমে এবং নেতার আনুগত্যের দ্বারা আল্লাহ্ পাক রাব্বুল ‘আলামীনের সাহায্য লাভ করা যায়। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত হলো বদরের ঐতিহাসিক যুদ্ধ।